নীলাভ জলের সমুদ্র সৈকত, সবুজে ঢাকা পাহাড়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এবং কালাপানি নামে পরিচিত আন্দামান ভ্রমণ এক কথায় অসাধারণ। ব্রিটিশ আমলের আন্দামানের অনেক ঘটনা সম্পর্কে আমরা সবাই কম বেশি জানি। সেটার কিছুটা চাক্ষুষ করতে একবার আন্দামানে পা রাখতেই পারেন।
প্রচুর মানুষ আছেন যারা একা একা বেড়াতে যেতে ভয় পান। বেড়াতে গিয়ে কোথায় থাকবেন, কিভাবে ঘুরবেন, কত টাকা খরচ হবে, জিনিসপত্র চুরি হবে কিনা, এসব চিন্তা করে নিজেকে গুটিয়ে রাখেন।
আন্দামান ভ্রমণে সেসব চিন্তা করবেন না। আন্দামান এমন এক জায়গা যেখানে চুরি হবার ভয় নেই। থাকার জায়গার অভাব নেই। আন্দামান ঘুরতে গেলে প্রচুর খরচ হয় ভেবে অনেকেই ওদিকে যায় না।
প্লেন খরচ বাদ দিলে, আন্দামান ঘোরার খরচ কেরল, রাজস্থান, শিলং ঘোরার খরচের থেকেও কম। যদি ফ্যামিলি নিয়ে বা গ্রুপ ট্যুর করেন।
আমি নিজে নিজেই ভ্রমণ করি সব জায়গায়। তাই আমার অভিজ্ঞতা দিয়েই বলবো, ভালো করে ঘুরতে গেলে নিজে নিজেই ভ্রমণ করতে হয়। নিজেরা প্ল্যান করলে বা নিজেরা সমস্ত কিছু বুকিং করলে, ঘোরা, থাকা খাওয়া ভালো হয় আর খরচও কম হয়।
কিভাবে প্ল্যান করবেন?
যেখানেই বেড়াতে যাবেন, সেই জায়গাটা ভালো করে স্টাডি করবেন। কোথায় কোথায় যাবেন, কি কি দেখবেন সব প্ল্যান করে নিন। নেট থেকে আন্দামান সম্পর্কে একটু জেনে নিতে পারেন। কি কি ঘোরার আর দেখার আছে।
আন্দামান কিভাবে যাবেন সেটাই বলি এবার। ৫ থেকে ৬ দিন থাকবেন ঠিক করে চলে যাবেন। প্লেন-এ যাতায়াত করাই ভালো আন্দামান ভ্রমণে। যে সময় প্লেন-এর টিকেটের দাম কম পাবেন কেটে ফেলুন। সকালের ফ্লাইট ধরে চলে যাবেন। ২ ঘন্টা সময় লাগে যেতে।
প্রথমেই বলে রাখি, এখান থেকে কিছু বুকিং করার দরকার নেই। আন্দামান ঘোরার জন্য ওখানের লোকাল এজেন্ট ভালো বলেই আমার মনে হয়। অনেকটা দরদাম করা যাবে। হোটেল বুকিং নিজে দেখে করতে পারবেন ভালো জায়গায়। যেখান থেকে লোকাল ঘোরার জায়গাগুলো কাছাকাছি হবে।
আন্দামান ঘোরার প্ল্যান কোথায় করবেন?
পোর্টব্লেয়ার নামার পরেই ওখানকার লোকাল এজেন্ট আপনার সাথে কন্ট্যাক্ট করবে। ওদের সাথেই প্ল্যান করবেন। তবে আমার কথাগুলো মাথায় রাখবেন। অনেকটাই দরদাম করবেন আর যত কম পারবেন অ্যাডভান্স করবেন। বলবেন ঘোরার মাঝে মাঝে টাকা দেবো। ওদের সাথে "পার হেড" প্ল্যান করবেন না। ফ্যামিলি ট্যুর প্ল্যান করবেন। অনেক কম হবে।
ওদের সাথেই ট্যুর প্ল্যান কেন করবেন? আন্দামান মানেই দ্বীপে দ্বীপে ঘোরা। আর ওদের সাথে বিভিন্ন নৌকা বা জাহাজের সেটিং থাকে। সে কারণে নৌকা বা জাহাজের টিকিট খরচ ওদের পুরো দিতে হয়না। বিভিন্ন দলের সাথে আপনাকে বা আপনার ফ্যামিলিকে সেট করে দেবে।
আন্দামানে কোথায় থাকবেন?
আন্দামানে প্রচুর হোটেল আছে, যেগুলোতে থেকে আপনি বুঝতেই পারবেন না আন্দামানে আছেন নাকি আপনার পাশের কোনো গ্রামে। প্রপার আন্দামানে থাকবেন। ট্যুর এজেন্ট আপনাকে অটোতে তুলে দেবে হোটেল দেখে নেবার জন্য। হোটেলে ঢোকার পরেই আসবে এজেন্ট পুরো ট্যুর প্ল্যান করার জন্য।
অটো করে সোজা চলে যাবেন নেতাজি স্টেডিয়াম-এর কাছে। ওখানে পেয়ে যাবেন হোটেল বা লজ। দরদাম করে নিজে বুকিং করলে খরচ কম পড়বে। ওখানকার ভিউ দারুন। হোটেল থেকেই সমুদ্র দেখতে পাবেন। গুগল ম্যাপ-এ দেখে নেবেন কাছাকাছি হোটেলের নাম। আমি এখানে সেগুলোর নাম বলছি না। ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় হোটেল পাবেন। আন্দামানে হোটেল, লজ প্রায় সবই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।
আন্দামানে কি খাবেন?
আন্দামানে খাওয়া খরচ কিন্তু নিজের। এটাই একটু বেশি হয়। তাই নিজের পকেট অনুযায়ী খাওয়াদাওয়া করতে পারেন। মাথায় রাখবেন আন্দামানে টুরিস্টদের থেকে বেশি টাকা চার্জ করা হয় সব কিছুতেই। ওখানে প্রচুর বাঙালি পাবেন। ওদের কথা শুনে বুঝতে পারবেন, সবাই শুধু টাকা ইনকাম করছে। দেশে ফেরেনি বহুকাল।
আন্দামানে কি কি দেখবেন?
আন্দামান শহরটা ঘুরে দেখবেন একদিন। সমুদ্রিকা ফিশ একোরিয়াম, সেলুলার জেল, গান্ধী পার্ক ইত্যাদি জায়গা আছে ভালো। আছে রস আইল্যান্ড, কোরাল বিচ, মাড ভলক্যানো, ভাইপার দ্বীপ, হ্যাভলক দ্বীপের রাধানগর সমুদ্র সৈকত [ অবশ্যই যাবেন ], বারাটাং [ সমুদ্রের নোনা জমে তৈরী হয়েছে গুহা ] এছাড়া আরো অনেক কিছু আছে।
আন্দামানেও হয় দূর্গা পূজা। তাই দূর্গা পুজোর সময় গেলে আপনাকে দূর্গা ঠাকুরও দেখিয়ে দেবে ট্যুর এজেন্ট। আগে থেকে সব বলে রাখবেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন