দক্ষিণ ভারতের কাশ্মীর, কেরালার "মুন্নার" কে প্রাধান্য দিয়ে ঘুরে নিতে পারেন থেক্কাডি, আলেপ্পি, কোভালাম এবং কন্যাকুমারী

Munnar Tea Plantation

কেরালার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। কেরালাকে তাই ভগবানের নিজের শহর বলাহয়। সেই কেরালাতেই আছে এমন এক জায়গা যেখানে বরফ না পড়লেও পাবেন ঠান্ডা আবহাওয়া আর অফুরন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। জায়গাটা কেরালার মুন্নার। যেটাকে দক্ষিণ ভারতের কাশ্মীর-ও বলা হয়। চা বাগান এবং চায়ের সাথে ভালো করে পরিচয় করতে হলে আমার প্রথম পছন্দ মুন্নার। এছাড়াও ভারতবর্ষের মধ্যে হানিমুন করার মতো যে জায়গাগুলো আছে তার মধ্যে মুন্নার একটা উল্লেখযোগ্য নাম। 

মুন্নার হলো দক্ষিণ ভারতের ইদুক্কি জেলার একটি পাহাড়ি শহর। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ১৬০০ মিটার বা ৫২০০ ফুট। মুন্নার এমন এক জায়গা যেখানে কিছু চা গাছ আছে যেগুলো ১০০ বছরের পুরানো। এখানে বেশ কয়েকটা সুন্দর চা বাগান আছে, যেগুলো ঘুরে দেখতে ভালো লাগবে। এছাড়াও আছে বিভিন্ন মশলার বন্য জঙ্গল। যেখানে মশলার গন্ধযুক্ত শীতল বাতাস পাবেন। 

মুন্নার যাবার সেরা সময় কোনটা ?

মুন্নারের আবহাওয়া খুব সুন্দর। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী মুন্নার যাবার সেরা সময়। এই সময় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রীতে নেমে যায় কখনো কখনো। তাই এই সময়টা ছুটি কাটাবার বা হানিমুন করার জন্য ভালো সময়। 

মুন্নার কেন বিখ্যাত ?

মুন্নার হলো এমন এক শৈল শহর, যেখানে আছে বিভিন্ন প্রজাতির পাহাড়ি উদ্ভিদ। তবে মুন্নার চা বাগানের জন্য বিখ্যাত। মুন্নার বেড়াতে গেলে টাটা টি মিউজিয়াম ঘুরে দেখা আবশ্যক। চা তৈরী সমস্ত রকম প্রক্রিয়া এখানে হাতে কলমে দেখানো হয়। যেটা আপনি বেশ উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়াও আছে বেশ কয়েকটা প্রাকৃতিক জলপ্রপাত। তার মধ্যে আটুক্কাদ জলপ্রপাত, লাক্কাম জলপ্রপাত, নাইমাক্কাদু জলপ্রপাত উল্লেখযোগ্য। 

Munnar Tea Plantation

মুন্নার যাবার প্ল্যান কিকরে করবেন ?

মুন্নার থেকে ঘোরার জন্য দুটো দিন যথেষ্ট। তাই মুন্নারের সাথে ঘুরে নিতে পারেন আরো কয়েকটা জায়গা। থেক্কাডি, আলেপ্পি, কোভালাম ও কন্যাকুমারী। সবকটা জায়গাই বেশ সুন্দর এবং দেখার মতো। 

থেক্কাডিতে আছে পেরিয়ার ন্যাশনাল পার্ক। যেখানে বোটে করে বন্য প্রাণী ঘুরে দেখার মজাই আলাদা। হরিণ এবং হাতি অবশ্যই দেখতে পাবেন এই জঙ্গলে। জনপ্রতি ৪৫ টাকা করে লাগে বোটে ঘোরার জন্য। বাচ্চাদের ১৫ টাকা আর বিদেশিদের ৫০০ টাকা। ক্যামেরার জন্য আলাদা টাকা লাগে। 

আলেপ্পি বিখ্যাত হাউস বোট ভ্রমণের জন্য। এখানে ব্যাকওয়াটারে হাউস বোট নিয়ে ঘোরার মজাই আলাদা। হাউস বোট-এ থাকার সবচেয়ে কম খরচ ৩৫০০ টাকা প্রতি রাত। এছাড়াও নৌকা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ ভ্রমণ করার ব্যবস্থাও আছে যদি হাউস বোটে না থাকতে চান। সেটার খরচ ১২০০ থেকে ১৫০০ পড়বে প্রতি তিন ঘন্টার জন্য। 

কিভাবে যাবেন মুন্নার ?

হাওড়া থেকে ট্রেন ধরে নেমে পড়ুন এর্নাকুলামে। ট্রেন পৌঁছায় বিকেলবেলায়। তাই রাতটা ওখানেই কাটাবেন। স্টেশন-এর সামনেই পেয়ে যাবেন অনেক হোটেল। দামদর করে উঠে পড়ুন হোটেলে। হোটেলে ব্যাগ রেখে বেরিয়ে পড়ুন খাবার আর গাড়ির খোঁজে। স্টেশন-এর কাছেই পেয়ে যাবেন কার-রেন্ট-এর অফিস। ওখান থেকে গাড়ি নিলে অনেক কম খরচে হয়ে যাবে। শুধু গাড়ি নেবেন। হোটেল নিজেরা স্পট বুকিং করবেন। অনেক খরচ কম হবে। 

মুন্নার 

১ম দিনটা এর্নাকুলামে কাটানোর পর দ্বিতীয় দিন গাড়ি নিয়ে সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়ুন মুন্নারের উদ্দেশ্যে। ওখান থেকে মুন্নারের দূরত্ব ১৬৩ কিলোমিটারের মতো। সময় লাগবে ৪ ঘন্টা।  রাস্তায় সাইটসিইং করতে করতে দুপুর নাগাদ পৌঁছাবেন মুন্নার। 

দুটো দিন মুন্নারের জন্য প্ল্যান করুন। মুন্নারে ১২০০-১৪০০ টাকায় হোটেল পেয়ে যাবেন। অবশ্যই ঘুরে দেখবেন চা বাগান, কুন্ডলা লেক, মাট্টুপেটটি বাঁধ, এবং টাটা টি মিউজিয়াম। 

কুন্ডলা লেক

Kundala Lake

মাট্টুপেটটি বাঁধ

Mattupetty Dam

টি মিউজিয়াম

Munnar Tea Museum

থেক্কাডি

৪থ দিন সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়ুন থেক্কাডির উদ্দেশ্যে। রাস্তায় করে নেবেন ব্রেকফাস্ট। মুন্নার থেকে থেক্কাডির দূরত্ব ৮৫ কিলোমিটার। সময় লাগবে ৩ ঘন্টা। 

থেক্কাডি পৌঁছে চেষ্টা করবেন পারিয়ার লেক ঘুরে নিতে। বড় নৌকায় লাইফ জ্যাকেট পরে ঘুরবেন লেক। প্রচুর পাখি এবং বন্য প্রাণী দেখতে দেখতে সময়টা ভালোই কাটবে। পারিয়ার ঘুরে হোটেলে ফিরে লাঞ্চ করে রেস্ট নিন। সন্ধ্যেবেলা কেরালার মার্শাল আর্ট শো দেখতে পারেন। সেটাও বেশ ভালো। সেইদিন রাতটা কাটিয়ে পরের দিন বেড়িয়ে পড়ুন আলেপ্পির উদ্দেশ্যে। 

পারিয়ার লেক

Periyar Lake

আলেপ্পি

৫ম দিনেও সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়লে আলেপ্পি পৌঁছাতে সময় লাগবে ৪ ঘন্টা মতো। দূরত্ব ১৩৯ কিলোমিটার। যদি আপনার পকেট ভালো থাকে তাহলে হাউস বোট-এ থাকতে পারেন। নয়তো ওখানে বিভিন্ন বাজেটের হোটেল আছে। কপাল ভালো থাকলে ৫০০ টাকায়ও থাকতে পারবেন। ঘন্টা তিনেকের জন্য বোট নিয়ে ঘুরে নিন ব্যাকওয়াটার। ঘুরতে ঘুরতে মাঝি আপনাকে মাছ ভাজা খাওয়াবার জন্য এক জায়গায় নিয়ে যেতে পারে। সেখানে মাছ ভাজা খেতে পারেন। তবে দাম একটু বেশি। যদিও টাটকা মাছ ভেজে দেবে আপনার পছন্দ মতো। নৌকা যার থেকে ভাড়া নেবেন তার থেকেই হোটেল ভাড়া নিয়ে কথা বললে ভালো হবে। ওরাই সবথেকে কম খরচের হোটেলের সন্ধান আপনাকে দিতে পারবে। 

কোভালাম

৬ঠ দিনও সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়ুন। কারণ ওখান থেকে চলে যাবেন কোভালাম সমুদ্র সৈকত। কেরালার এক অসাধারণ সমুদ্র সৈকত। দুরুত্ব ১৬১ কিলোমিটার। সময় লাগবে ৪ ঘন্টার কিছু বেশি। কোভালাম সমুদ্র সৈকতে বেশ কিছুটা সময় কাটান। ওখানে একটা রাত থাকতেও পারেন নয়তো ট্রেন ধরে কন্যাকুমারী চলে যাবার প্ল্যানও করতে পারেন। কোভালাম বিচ থেকে তিরুবন্তপুরম রেলওয়ে স্টেশন ২২ কিলোমিটার দূরে। সময় লাগে ৩০ মিনিট মতো। ওখান থেকে কন্যাকুমারী যাবার ট্রেন পাবেন বিকেল ৪টে নাগাদ। ট্রেন ধরে সোজা পৌঁছে যান কন্যাকুমারী।

Kovalam Beach

কন্যাকুমারী 

কন্যাকুমারীতে দুটো দিন থাকুন। ওখানে কন্যাকুমারী ছাড়াও একটা দিন সাইটসিইং করুন। বাস-এ করে বেশ কয়েকটা ভালো জায়গা ঘোরায়। তার মধ্যে কন্যাকুমারী ওয়াক্স মিউজিয়াম, লর্ড সুব্রামানিয়া মন্দির, ভাট্টাকট্টাই ফোর্ট উল্লেখযোগ্য। তারপর আপনার ট্রেনের টিকিট অনুযায়ী ট্রেন ধরে হাওড়া ফিরে আসুন। 

Kanyakumari

মন্তব্যসমূহ