একাকিত্ব সময় কাটানোর জন্য কলকাতা ঘোরার সবথেকে ভালো জায়গা গঙ্গা ঘাট বা নদীপাড়

Ganga Ghat Mayer Ghat

ব্যস্ততা যখন রাহুর মতো গ্রাস করছে চাঁদপানা হাসি। ভারী মনটা যখন ফিরে যেতে চায় হালকা ছোটবেলায়। তখন রোজকার একঘেয়ে ভাল্লাগেনা থেকে মাঝে মাঝে উড়নচন্ডী হয়ে এদিক ওদিক বেড়িয়ে পড়তে বেশ ভালোই লাগে। কিন্তু যানজট ভিড়ভাট্টার মধ্যে সময় কাটানোর জন্য ভালো জায়গার খোঁজ পাওয়া মুশকিল এই শহরে। শহরের কোনায় কোনায় বাসা বেঁধেছে হৈ-হট্টগোল, ঝুট-ঝামেলা। 

এসবের মধ্যেও আছে এমন জায়গা যেখানে নিরিবিলিতে বসে সময় কাটাতে পারেন ঘন্টার পর ঘন্টা। যেখানে বসে দেখতে পাবেন বিভিন্ন রকমের মানুষ। বিভিন্ন রকমের আচার অনুষ্ঠান।

কলকাতা পোর্টের তথ্য অনুযায়ী কলকাতায় আছে ৪২টা গঙ্গা ঘাট, যেগুলো তারা দেখাশোনা করে। শহরের ভিড়ভাট্টা যানজট কাটিয়ে চলে যেতে পারেন আপনার কাছাকাছি কোনো ঘাটে বা নদীপাড়ে।

এই ৪২টা ঘাটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নাম করেছে বাবুঘাট। আজও যে ঘাট বা গঙ্গার পাড়ে বিকেলের আড্ডা জমে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কলকাতার প্রিন্সেপ ঘাট ও বাগবাজার এলাকার মায়ের ঘাট, কুমারটুলি এবং আহিরীটোলা। প্রিন্সেপ ঘাটে অতটা নিরিবিলি জায়গা পাবেন না যতটা বাগবাজারের দিকে পাবেন।

আমরা যারা বারানসির ঘাটে ঘুরে বেড়িয়েছি এবং বারবার ওই ঘাটের প্রতি আকর্ষিত হয়েছি তাদের ভালো লাগবে বাগবাজারের দিকের গঙ্গাপাড়। এই গঙ্গাপাড়ের প্রাচীন ইতিহাস এবং প্রাচীন অতিহ্য আপনাকে বারবার আকর্ষণ করবে।

কি দেখবেন ?

বাগবাজার ঘাটের প্রাচীন নাম ছিল বিচালি ঘাট। একটা সময় মা সরদার পাকাপাকি থাকার ব্যবস্থা হয় বাগবাজার ঘাটের কাছেই এক বাড়ির দোতালায়। সেখান থেকেই মা আসতেন এই বিচালি ঘাটে। তাই বিচালি ঘাটের নাম পাল্টে হয়ে যায় মায়ের ঘাট। এই ঘাটে আসলে পাশেই মায়ের বাড়িও ঘুরে যেতে পারেন। 

মায়ের ঘাটে বসে সময় কাটাতে পারেন, সূর্যাস্ত দেখতে পারেন অথবা হাঁটতে পারেন গঙ্গাপাড় ধরে কুমারটুলি বা আহিরীটোলার দিকে। এই পথে হাঁটতে হাঁটতে দেখতে পাবেন আরো অনেক ঘাট। প্রচুর ছোট বড় মন্দির। আছে প্রচুর বটতলা। একাকিত্ব কাটানোর জন্য কলকাতার সবথেকে ভালো জায়গা বলে আমার মনে হয়েছে।

হাঁটতে হাঁটতে চলে যেতে পারেন কুমারটুলি। কলকাতায় কুমোরদের বিখ্যাত বাসস্থান। এখানে বছরের প্রতিটা সময় কিছু না কিছু দেখতে পাবেনই। যেকোনো পূজা মরসুমের আগে এখানে প্রচুর ভিড় জমে। ঠাকুর তৈরী দেখার ভিড়। এখানকার ঠাকুর শুধু দেশে না বিদেশেও পাড়ি জমায়।

সময় করে চলে যেতে পারেন আহিরীটোলা। এটাও একটা বিখ্যাত ঘাট বা নদীপাড়। এই আহিরীটোলাতেই আছে বেশ কয়েকটা ঘাট। এখানে বসে সময় কাটাতে পারেন নয়তো চলে যেতে পারেন পাশের কয়েকটা মন্দিরে। এখানেই আছে বিখ্যাত বাবা ভূতনাথ ধাম। শোনাযায় এই মন্দিরে পুজো দিলে মনস্কামনা পূরণ হয়। তাই এই মন্দিরের মহাদেবকে শুধু ভূতনাথ না কামনা পূর্তি মহাদেবও বলা হয়। এছাড়াও আছে বৈষ্ণদেবী মন্দির। আছে অন্যান্য মন্দিরও। আছে ভূতনাথ পার্ক। যেখানে বসে অপরপাড়ে দেখতে পাবেন ৫১ ফুট উঁচু শিব মূর্তি। আহিরীটোলা ঘাট থেকে নদী পার হয়ে চলে যেতে পারেন সেখানেও। সেখানে দেখতে পাবেন ১২টা জ্যোতির্লিঙ্গ। এক জায়গায় একসাথে ১২টা জ্যোতির্লিঙ্গ দেখতে ভালোই লাগবে, ভালোই সময় কাটবে। 

Ganga Ghat Ahiritola

কিভাবে যাবেন ?

হাওড়া বা শিয়ালদাহ থেকে যেকোনো বাস ধরে চলে যেতে পারেন বাগবাজার। সেখান থেকে অটো করে বা হেঁটে চলে যেতে পারেন বাগবাজার ঘাট। বাগবাজার থেকে হেঁটেও চলে যেতে পারেন শোভাবাজার কুমারটুলি ঘাট। তবে আহিরীটোলা ঘাট কিছুটা দূরে। সেটার জন্য অটো করে নিতে পারেন নয়তো লম্বা হাঁটা লাগাতে পারেন।

মন্তব্যসমূহ