এই তারিখে
গুয়ে মঠ
বৌদ্ধ ধর্মের প্রাচীন ইতিহাস
লাহুল-স্পিটি
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
কলকাতায় থেকে কলকাতা ঘুরে দেখেছেন কখনো? হয়তো ঘুরেছেন। ঘুরেছেন ভিক্টোরিয়া, হাওড়া ব্রিজ, বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়াম, গড়ের মাঠ এইসব। কলকাতাকে ভালো করে জানতে হলে হেঁটে ঘুরে দেখতে হবে। কলকাতার শিল্প সংস্কৃতি, কলকাতার ঐতিহ্যকে জানতে হলে ফিরে যেতে হবে প্রাচীন কলকাতায়।
দিন বদলের হাওয়ায় বদলে যাচ্ছে কতকিছুই। সেই সঙ্গে বদলে যাচ্ছে গোটা কলকাতা, গোটা বাংলা, গোটা দেশ। আরো বলতে গেলে বলা যায় বদলে যাচ্ছে গোটা পৃথিবী। তবু মাঝে মাঝে ফিরে যেতে ইচ্ছা করে পুরানো দিনগুলোতে। ইচ্ছা করে যদি পুরানো কলকাতাকে একবার দেখা যায়।
কলকাতার ঐতিহ্যবাহী যে ভবনগুলো আছে তার মধ্যে অন্যতম নাম মেটকাফ হল। মেটকাফ হল তৈরী হয়েছিল ভারতের তৎকালীন গভর্নর মেটকাফের স্মৃতির উদ্দেশ্যে। বাড়িটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল ১৯শে ডিসেম্বর ১৮৪০ সালে এবং শেষ হয় ১৮৮৮ সালে। দশ ফুট উঁচু শক্ত ভিতের উপর বাড়িটি কলকাতার স্ট্র্যান্ড রোড এবং হেয়ার স্ট্রিটের সংযোগ স্থলে দাঁড়িয়ে আছে। প্রাচীন গ্রীক মন্দিরের মতো দেখতে এই বাড়িটা ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যিক স্থাপত্যের প্রতিফলন।
মেটকাফ হলের প্রবেশদ্বার দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলে ডানদিকে পাবেন টিকিট কাউন্টার। মেটকাফ হলের প্রবেশ মূল্য জন প্রতি ২৫ টাকা। টিকিট কাউন্টারের খাতায় নিজের নাম ঠিকানা ফোন নম্বর দিয়ে টিকিট নিতে হয়। শক্ত পোক্ত ইঁট দিয়ে বাঁধানো উঠোন। প্রবেশ করার পর বাম হাতে পর্বে তথ্য স্তম্ভ। যা থেকে মেটকাফ হল সম্পর্কে জানতে পারবেন। আছে আইনি নোটিশও। যেটাতে বলা আছে, বাড়িটিকে "প্রাচীন স্মারক এবং পুরাতাত্বিক স্থল এবং অবশেষ আইন, ১৯৫৮" তথা সংশোধিত ও অনুমোদিত আইন ২০১০ অনুযায়ী রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্মারক হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। যদি কেউ এই বাড়িটি ধ্বংস করতে চেষ্টা করে, অথবা অপসারণ, ক্ষতি, পরিবর্তন, বিকৃতি বা বিপন্ন করে তবে উপরোক্ত আইন অনুযায়ী সেই ব্যক্তির দুই বছর কারাবাস অথবা এক লক্ষ্য টাকা জরিমানা অথবা উভয়দন্ডে দণ্ডিত হতে পারে।
সিঁড়ি দিয়ে বারান্দায় উঠলে আশেপাশে দেখতে পাবেন ৩৬ ফুট উঁচু বেশ শক্ত পোক্ত কয়েকটা গম্বুজ, যেগুলো এই বাড়িটার ছাদের ভার বহন করছে। তথ্য অনুযায়ী গোটা বাড়িতে এমন ৩০ টা গম্বুজ আছে। ১৯৯২ সালে এই মটকাফ হলকে সংরক্ষিত স্মারক হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে।
Archaeological Survey of India-র তত্বাবধানে থাকা এই মেটকাফ হলে রয়েছে "আমি কলকাতা মিউজিয়াম"। যেখানে কলকাতা তথা বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যের এবং কলকাতার সংস্কৃতির ঝলক দেখতে পাবেন। মেটকাফ হলে যাবার আগে নিচের ভিডিওতে ক্লিক করেও দেখে নিতে পারেন।
মিউজিয়ামে ঢুকেই দেখবেন সুন্দর আল্পনা, যেটার উপর দিয়ে হেঁটে প্রবেশ করবেন ভিতরে। বাম দিকে দেখতে পাবেন বলিদান। যেখানে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের তালিকা এবং ছবি দেখতে পাবেন। ডানদিকের ঘরটিতে দেখতে পাবেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ৭৫ বৎসর পূর্তি উৎসব।
তারপর সোজা গেলেই দেখবেন আলো-ছায়া দিয়ে তৈরী বিশাল আল্পনা। যেখানে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে পারেন নিজেদের। "আমি কলকাতা" সম্পর্কে জানতে, পাশেই দাঁড় করানো লাল আর কালো পোস্টার দুটি পড়ে নিতে পারেন।
ডানদিকের দরজা দিয়ে এগোলেই দেখতে পাবেন উপরতলায় যাবার সিঁড়ি। সেই সিঁড়ির পাশেই রয়েছে একটা হাতে টানা রিক্সা। ওই রিক্সার উপর রয়েছে অসংখ্য টুকরো কাগজ। কলকাতাকে ভালোবাসার টুকরো কাহিনী।
সিঁড়ি দিয়ে উঠলেই দেখবেন ভিক্টোরিয়া-র বিশাল একটা অসাধারণ ছবি। পাশাপাশি আরো দেখতে পাবেন অসংখ্য ছায়া-ছবির বাঁধানো ছবি। আছে পুরানো কলকাতার রাস্তার যানজটের ছবিও।
সোজা ঢুকে পড়ুন সামনের ঘরটাতে। যে ঘরটার মাঝখানে রয়েছে একটা বিশাল নৌকা। আর রয়েছে শহরের গল্প, যেটা ছবির আকারে দেখবেন। পরপর কয়েকটা ঘর ঘুরতে হবে এবার। পরের ঘরটিতে রয়েছে মনীষীদের নিয়ে লেখা।
সবচেয়ে ভালো লাগবে পরের ঘরটায়। যেখানে পাবেন "চন্দন কুটির"। ঘরের ঢোকার ডানদিকের দেয়ালটা এমনভাবে তৈরী করা হয়েছে যেন মনে হবে কোনো বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। ওই বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুললে মনে হবে সত্যি কলকাতার কোনো পুরানো বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা। রয়েছে দারুন দারুন সব ছবি। বনেদি বাড়ির পুজোর ছবিটা অসাধারণ।
পাবেন বিশাল আকার বিয়ের টোপর, কলাগাছ, থালায় সাজানো কিছু জিনিসপত্র, যেগুলো অসাধারণ লাগবে। আর রয়েছে দূর্গা ঠাকুর।
ওই ঘরটা পেরিয়ে পরের ঘরে পাবেন আরো ছবি। যেগুলো কলকাতার ঐতিহ্য বহন করে। পাবেন মাছ বাজার, কফি হাউস, মিষ্টির দোকান, গান বাজনা, রাস্তার খাবার (ফুচকা) এবং ক্লাব সংস্কৃতি।
ঢুকে পড়ুন পরের ঘরে। এটাই শেষ ঘর। এখানে পাবেন কলকাতার সংস্কৃতিক ঐতিহ্য। ভালো করে ঘুরে দেখুন ঘরটা। অনেক কিছুই পাবেন। আর পাবেন একটা "প্লে বাটন"। যেটা টিপলেই পর্দায় ভেসে উঠবে পুরানো কলকাতা। পুরানো কলকাতার জীবনযাত্রার ঝলক দেখতে পাবেন এখানে। বেশ কয়েকটা প্রজেক্টর ইতিমধ্যেই কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। তাই বলবো এটাও বন্ধ হবার আগে একবার ঘুরে আসুন। কিছুটা সময় এখানে কাটিয়ে আসুন। ঘোরার এবং ছবি তোলার এ এক অসাধারণ জায়গা বলতে পারি। পুরানো কলকাতার সাথে একটু মিশে দেখুন ভালোই লাগবে।
সবথেকে কাছের মেট্রো স্টেশন এসপ্ল্যানেড। কলকাতার মিলেনিয়াম পার্ক প্রায় সবাই চেনেন। যেখান থেকে খুশি বাস ধরে চলে যান। ওই পার্কের উল্টো দিকেই পাবেন এই বিশাল বাড়িটি।
সাধারণত সমস্ত মিউজিয়াম সোমবার বন্ধ থাকে। এটাও তাই থাকতো। কিন্তু এখন মেটকাফ হল প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তাই যেকোনো দিন চলে যেতে পারেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন