এই তারিখে
গুয়ে মঠ
বৌদ্ধ ধর্মের প্রাচীন ইতিহাস
লাহুল-স্পিটি
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
ভ্রমনটা আমার একটা নেশা বলতে পারেন। আর এই নেশার কারনেই মাঝে মাঝে বেড়িয়ে পড়া। কখনো একা, আবার কখনো পরিবার সঙ্গে নিয়ে। পরিবার সঙ্গে থাকলেও একাকিত্বও আমার সঙ্গ ছাড়েনা। তাই কিছুটা সময় নিজেকে দিতেই হয়। আর সেটা টয়লেট করার সময় হলেও হবে। এমনি এক বাথরুম ভ্রমণ কাহিনী শোনাবো আজ।
বাঙালির ভ্রমণ বা বেড়ানো মানেই কিন্তু আর সেই দীঘা, পুরী, দার্জিলিং নেই। বাঙালি এখন খুঁজে পেয়েছে বেতালা বেখাপ্পা জায়গা। যেখানে বেড়াতে গেলে বেশ ফাঁকা নিরিবিলি পরিবেশ পাওয়া যায়। তেমনি আমি বেড়াতে গেছিলাম এক পাহাড়ি গ্রামে। তবে ভ্রমন মানেই পাহাড়, জঙ্গল, নদী বা সমুদ্র হতে হবে এমন নয়। সেটা নিজের বাড়ির আশপাশেও হতে পারে। যদি একটু আধটু খোলামেলা পরিবেশ পাওয়া যায়। গাছপালা ঝোপঝাড় বা ফাঁকা পরিবেশ আমার একটু বেশি ভালোলাগে। এছাড়া কোনো মাঠ বা ফাঁকা রাস্তা হলেও চলে যায়। কারন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আমার দারুণ লাগে।
যাইহোক, এবার ভ্রমনে ফিরি। পাহাড়ি গ্রাম ও তার আশপাশের সাইটসিন সেরে দুপুর দুপুর ফিরে এসেছি। তারপর দুপুরের খাবার খেয়ে একটু ঘুম দেবো ঠিক করেছি। দুপুরের ভাত ঘুমের নেশাও আমার হালকা হালকা আছে। তবে ঘুমের আগে ইচ্ছে হলো একটু একাকিত্ব সময় কাটানোর। এছাড়া নিরিবিলি পরিবেশে ঘুরে বেড়াতেও কমবেশি সবাই ভালোবাসে বলেই আমার মনে হয়। তাই একটু বেশি করে জল খেয়ে বাথরুম করার উদ্দেশ্য নিয়েই বেড়িয়ে পড়লাম।
গ্রাম্য আঁকাবাঁকা পথ আর তার আশপাশে বড় বড় গাছ। বেশ ভালোই পরিবেশ। কিছুটা এগোলেই সবুজ ঘাসে ঢাকা মাঠ। যেখানে খালি পায়ে হাঁটার উপকারিতাও আছে আনন্দও আছে। রাস্তা ছেড়ে ওই মাঠ দিয়ে একটু এগোলেই বড় বড় গাছের জঙ্গল। একদম নিরিবিলি পরিবেশ। একদম নিস্তব্ধ চারিদিক। পাখির ডাক পর্যন্ত নেই। মনে হয় এই জঙ্গলে তেমন কোনো ফল ফুলের গাছ নেই তাই পাখির অভাব।
এবার খুঁজতে লাগলাম একটা ভালো বড় গাছের গোড়া, যেখানে নিজেকে আড়াল করে মুত্র বিসর্জন করা যায়। কিন্তু সমস্ত গাছই তরতাজা। আমি একটু স্যাঁতসেঁতে আর পুরানো গাছের খোঁজ করছি, যেটা দেখেও একটু আবর্জনা ফেলার জায়গা বলে মনে হবে। এমন জায়গাতেই আমরা সাধারণত মলমূত্র ত্যাগ করে থাকি।
অনেক খোঁজার পর একটা গাছ নজরে এলো যেটা অনেক পুরনো মনে হয়। গাছের গোড়া অনেকটাই পোকায় খেয়ে ফেলেছে বলেই মনে হয়। বেশ গর্ত মতো একটা জায়গা হয়ে আছে যেখানে নিজেকে অনায়াসে প্রবেশ করানো যায়। গাছটার প্রাচীনত্ব একটা দুটো ছবি তুলে নিতে বাধ্য করে। সেই মতোই কয়েকটা ছবি তুলে মুত্র বিসর্জন করার জন্য তৈরি হলাম। নজরে এলো গাছের গোড়ায় উঁই পোকার ঢিপি। বড় মায়া হলো। আমার কারনে কিছু নিরীহ জীবন শেষ হয়ে যাবে। বিনা বর্ষায় বন্যায় ভেসে যাবে কিছু প্রান। মনে পড়ে গেলো বানভাসি মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা। বেরিয়ে এলাম। এবার নালা নর্দমার খোঁজ করতে লাগলাম জোরদার। মুত্র বিসর্জন করতে গিয়ে থেমে যাওয়ার কারনে সেটা চেপে বসেছে।
আবার এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করতে শুরু করলাম। গাছের ছায়া আর ঠান্ডা থাকার কারনে ক্লান্তি তখনো শরীর স্পর্শ করতে পারেনি। তাই ভালোই লাগছিলো ঘুরতে। মনে হচ্ছিলো কলেজ জীবনে এমন একটা জায়গার বড় অভাব ছিলো। তখন সঙ্গী ছিলো অথচ নিরিবিলি জায়গা ছিলোনা। তখন মিস হয়ে গেছে অনেক কিছু। আর এখন মনে হয় বিষ হয়ে গেছে অনেক কিছু।
বাদ দেওয়া যাক সেসব কথা। নয়তো লোকে নিন্দে করবে। চরিত্র চেটে চটপটা স্বাদ নিয়ে নেবে।
এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করতে নজরে এলো একটা ভিজে ভিজে জায়গা। আর একটু এগোতেই দেখলাম হালকা জল নেমে আসছে একটা জায়গা থেকে। জলের উৎস খুঁজে পাওয়া গেলনা যদিও। একদম স্যাঁতসেঁতে জায়গা। গাছের পাতা পড়ে, জলপথের পাথরের ফাঁকে আঁটকে পঁচে গেছে। তবে জল বয়ে চলার কারনেই হয়তো দুর্গন্ধ জমতে পারেনি। ভাবলাম এটাই উপযুক্ত জায়গা। মনে হলো ঝর্নার জল কিছুটা বাড়িয়ে দিই। তৈরি হলাম আর মনে পড়ে গেলো হড়কা বানের কথা। হঠাৎ নদীর জল বেড়ে হড়কা বানে জীবনহানির ঘটনা প্রায়ই ঘটে। মনে হলো এই জলপথের পাশেই থাকতে পারে পিঁপড়ে বা পোকামাকোড়ের বাসা। আমার করনে ঘটতে পারে প্রানহানি। মায়া আমার মনের কোনায় কোনায় নিজের অজান্তেই কখন বাসা বেঁধে ফেলেছে বুঝতেই পারিনি।
ভাতঘুমের নেশা কেটে গেলেও চেপে গেছে টয়লেট। হাঁটা লাগালাম হোটেলের দিকেই। হাঁটার গতি এবার বড়াতেই হলো, কারন বাথরুমের খোঁজে আর একাকিত্ব সময় কাটানোর নেশায় চলে এসেছি অনেকটা পথ। এখন একটা চ্যালেঞ্জ নিয়েই বাড়ির পথে দ্রুত এগিয়ে চলেছি। প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলার আগেই আমাকে ফিরে যেতে হবে আমার গন্তব্যে। বাথরুম চেপে মনে মনে প্রার্থনা করতে করতে এগিয়ে চলেছি যাতে আমি সফলতা অর্জন করতে পারি। আর স্বচ্ছ ভারতকে যেন স্বচ্ছ রাখতে পারি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন