গরলগাছা রাজবাড়ী ও ১২ শিব মন্দির সহ জনাই রাজবাড়ী ভ্রমণ গাইড

Janai Tour Guide

এইযে প্রকৃতির মাঝে বেঁচে থাকা, এটাও একটা নেশা। সঙ্গে যদি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘুরে বেড়ানোর নেশা থাকে বা ফটোগ্রাফির নেশা থাকে, তাহলে আপনি নিশ্চিত এদিক ওদিক ছুটে বেড়াবেন। ফটোগ্রাফির বিভিন্ন দিক আছে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিভিন্ন মানুষ ফোটোগ্রাফি করে। সেসব দিকে আমি যাবো না। তবে যারা ভ্রমণ বা প্রাকৃতিক বিষয়ের উপর ফোটোগ্রাফি করেন তাদের জন্য কলকাতার কাছে বেড়ানোর ভালো জায়গাগুলোর মধ্যে একটা জনাই। কলকাতা থেকে মাত্র কয়েক ঘন্টা দূরে এই জনাই। সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীন সবকিছুই। প্রাচীন ধ্বংসাবশেষের উপর গড়ে উঠছে আধুনিকতার ইমারত। সেই প্রাচীনত্ব যাদের মন টানে তাদের জন্য জনাই ভ্রমণ আনন্দদায়ক হতে পারে। 

নেচার ফটোগ্রাফি জন্য জনাই ভ্রমণ করা যেতে পারে বা প্রাচীনত্বকে ভালোবেসেও জনাই ভ্রমণ করা যেতে পারে। প্রচুর সবুজ আছে এই জনাইতে। সামনের শীতে জনাইতে কাটাতে পারেন একটা দিনের কিছুটা সময়। রাস্তার পাশে বা একটু হাঁটলেই পেয়ে যাবেন জঙ্গলের পরিবেশ। এছাড়া আছে প্রাচীন রাজবাড়ী বা জমিদার বাড়ি বা বনেদি বাড়ি। বাড়িগুলোর আনাচে কানাচে, প্রতিটি আসবাবপত্রে আজও লেপটে আছে প্রাচীন আভিজাত্য। বৃদ্ধ বাড়িগুলোর পাঁজর গোনা যায় আজও। প্রাচীন মন্দির, দালান, দেয়ালগুলো পোজ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আপনার ফটোগ্রাফির অপেক্ষায়। 

কিভাবে যাবেন জনাই?

নিজের গাড়ি থাকলে বা গাড়ি ভাড়া করে যেতেই পারেন।  তবে কম খরচে জনাই যাবার সহজ উপায় হলো ট্রেন। হাওড়া থেকে ডাইরেক্ট ট্রেন ধরে চলে যেতে পারেন জনাই। হাওড়া - বর্ধমান কর্ডলাইন ট্রেন ধরে যেতে হবে জনাই রোড স্টেশন। ওখান থেকে অটো ধরে চলে যেতে পারেন জনাইয়ের চৌধুরী জমিদার বাড়ি বা রাজবাড়ীর কাছাকাছি। যদি অটো বুক না করেন। ওখান থেকে কিছুটা হেঁটে গেলেই পাবেন চৌধুরী বাড়ি। তারপর পায়ে হেঁটে হেঁটে ঘুরতে পারেন সবকটা রাজবাড়ী বা জমিদার বাড়ি। 

আর একটা রাস্তা হলো, ট্রেনে করে ডানকুনি নেমে গড়ালগাছা রাজবাড়ি হয়ে। শিয়ালদহ থেকেও ট্রেন ধরে চলে যেতে পারেন ডানকুনি স্টেশন। স্টেশন থেকে বেরিয়ে রাস্তা থেকে রানিং অটো ধরে নেবেন গড়ালগাছা রাজবাড়ীর জন্য। ভাড়া নেবে ১৫ টাকা। স্টেশন থেকে অটো নিতে গেলে জনপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা নেবে। একদম গড়ালগাছা রাজবাড়ির দরজায় নামিয়ে দেবে। রাজবাড়ি ঘুরে দেখতে পারেন, ছবি তুলতে পারেন। বাড়ির সদস্যরা সাধারণত ওখানে থাকেন না। শুধু পুজো বা উৎসবে ওখানে আসেন। পুজো বা উৎসবের সময় সেজে ওঠে রাজবাড়ি। রাজবাড়ির উল্টো দিকে পাবেন দুটো পুরানো মন্দির। এছাড়া আছে রথ। রাজবাড়ি থেকে বেরিয়ে একটু এগোলেই বামদিকে একটা গেট দিয়ে ঢুকলে পাবেন রথ। এখানে রথের উৎসবটাও বেশ ভালো করেই হয়। 

Garalgacha Rajbari

গড়ালগাছা রাজবাড়ি দেখে অটো করে চলে আসবেন চণ্ডীতলা চৌমাথা। ভাড়া নেবে ১০ টাকা। ওখান থেকে আবার অটো ধরবেন জনাই ১২ মন্দিরের জন্য। ভাড়া নেবে ২০ টাকা। 

কিভাবে জনাই ঘুরে দেখবেন?

জনাই ১২ মন্দির থেকে শুরু করুন আপনার জনাই ভ্রমণ। প্রথমেই ঘুরে দেখুন ১২ মন্দিরের আশপাশ। মন্দির ও তার পেছনদিকের মন্দির গাছপালা জঙ্গল ভালোই লাগবে। স্থানীয় মানুষের কথায় এখানকার বেশিরভাগ মন্দির ও আশপাশের জায়গা প্রাচীন রাজবাড়ির সম্পত্তি। ওখানকার রাজবাড়ি বা জমিদার বাড়িগুলো খুব একটা দূরে দূরে না। পায়ে হেঁটেই ঘুরে নিতে পারেন সবকটা জায়গা। 

Janai 12 Mandir

১২ মন্দির থেকে মিনিট পাঁচেকের দূরত্বে রয়েছে মিত্রদের জমিদার বাড়ি। ভিতরে ঢুকলেই প্রাচীন আভিজাত্য অনুভব করতে পারবেন। আশপাশ ঘুরে ছুঁয়ে দেখতে পারেন প্রাচীন ইতিহাস। ক্যামেরা বন্দি করতে পারেন সেসবও। বৃদ্ধ ভাঙাচোরা পাঁচিলের পাঁজর বলে দেবে তার আনুমানিক বয়েস। বিভিন্ন শরিকেরা নিজেদের নিজেদের আলাদা বাসস্থান গড়ে ফেলছে আস্তে আস্তে সেটাও দেখতে পাবেন। 

মিত্রবাড়ির বাইরে বেরোলেই দেখতে পাবেন ঐতিহাসিক রঘুনাথজির মন্দির। হলুদ রঙের উঁচু মন্দিরে পুজো হয় আজও। 

মিত্রবাড়ি থেকে বেরিয়ে আবার হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যাবেন আচার্য বাড়ি। সময় লাগবে ৫ মিনিট মতো। এই আচার্য বাড়ির দূর্গা পূজা সবথেকে প্রাচীন। ওনাদের কথায়, এই আচার্য বাড়ির দূর্গা ঠাকুর বিসর্জন হবার পর শঙ্খ বাজলে তারপর বাকি রাজবাড়ীর ঠাকুর বিসর্জনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। 

আচার্য বাড়ি থেকে সিংহ বাড়ির দুরুত্ব একটু বেশি। তাই একটু বেশি সময় লাগবে। গ্রামের পরিবেশে হাঁটতে হাঁটতে সময় ভালই কাটবে। দুপাশে সবুজ গাছপালার মাঝ দিয়ে এঁকে বেঁকে চলে গেছে গ্রামীণ পথ। ৭ থেকে ১০ মিনিট হাঁটার পর পৌঁছে যাবেন সিংহবাড়ি। এই বাড়ির মহেন্দ্রনাথ সিংহ ছিলেন কালীপ্রসন্ন সিংহের উত্তরপুরুষ। 

সঙ্গে বলে রাখি মিত্র বাড়ি, আচার্য বাড়ি এবং সিংহ বাড়ি সবকটাতেই দূর্গা পুজো হয় এবং পাঁঠাবলি হয়। দূর্গা পুজোর দুপুরে পৌঁছালে দেখতে পাবেন সেই পাঁঠাবলি। 

সিংহ বাড়ি থেকে বেরিয়ে আবার মিনিট পাঁচ সাত হাঁটলে পেয়ে যাবেন চৌধুরী বাড়ি। বাড়ির সামনে উন্মুক্ত প্রাঙ্গন এবং মাঝে রাজবাড়ী প্রবেশের রাস্তা। বামদিকে পড়বে ঘাট বাঁধানো বিশাল পুকুর। যেখানে গ্রামের মানুষ স্নান করে। 

Janai Rajbari

রাজবাড়ী ও তার আশপাশ ঘুরে দেখতে পারেন। ছবি তুলতে পারেন। দূর্গা পুজোর সময় গেলে পুজো দেখতে পারেন। এই চৌধুরী রাজবাড়ির দূর্গা পুজোতে বলির ব্যবস্থা আছে, তবে পাঁঠাবলি হয়না এখানে। এখানে ফল বলি দেওয়া হয়। 

এবার কিন্তু বাড়ি ফেরার পালা। তবে বাড়ি ফেরার সময় জনাইয়ের বিখ্যাত মনোহরা নিতে ভুলবেন না। এই মনোহরা জনাই ছাড়া আর কোথাও পাবেন না। এই মিষ্টিটা দেখতেও বেশ সুন্দর। বাইরেটা সাদা চিনির একটা আস্তরণ। ভিতরে সন্দেশ। 

Janai Monohara

চৌধুরী রাজবাড়ী থেকে বেরিয়ে সোজা যে রাস্তাটা চলে গেছে সেটা ধরেই হাঁটতে থাকুন। পুকুর গাছপালা দেখতে দেখতে এসে পড়বেন মেন্ রাস্তায়। ওখানে অপেক্ষা করবেন অটো বা টোটোর জন্য। ওখান থেকে অটো বা টোটোতে উঠে পৌঁছে যাবেন জনাই রোড স্টেশন-এ। ভাড়া লাগবে ১৫ টাকা।

স্টেশনে নেমে অনেক মিষ্টির দোকান দেখতে পাবেন। ওখানেই খোঁজ করবেন মনোহরা-র। প্রথমে একটা দুটো খেয়ে নিন। দাম মাত্র ১০ টাকা। খেয়ে পছন্দ হলে বাড়ির জন্য নিতে পারেন। তারপর ট্রেন ধরে আপনার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিন। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

মন্তব্যসমূহ