চন্ডীগড় থেকে সিমলা ভ্রমণের প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং সম্পর্ণ ভ্রমণ বৃত্তান্ত

লেট লতিফ ভারতীয় রেল দেরি না করলে আমরা এই চন্ডিগড় পৌঁছাতাম রাত দেড়টা কি দুটোয়। সেদিক থেকে দেখতে গেলে এই দেরিটা আমাকের পক্ষে ভালোই হয়েছে। কারণ সকাল না হলে আমাদের লাহুল স্পিটির গাড়ি ছাড়া মুশকিল। ভোর ৫:৪৫-এ আমরা যখন চন্ডিগড় নামলাম তখন আমাদের টেম্পো ট্রাভেলার আমাদের জন্য স্টেশনের বাইরে অপেক্ষা করছিলো।

আমরা ট্রেন থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে গেলো আমাদের যার যার লাগেজ গাড়ির মাথায় তুলে বেঁধে ফেলার কাজ। বেশি সময় লাগলো না আমাদের লাহুল স্পিটি যাত্রা শুরু করতে। এখান থেকে আমরা সোজা চলে যাবো সিমলা। যেখানে আজ রাতটা আমরা থাকবো।

ডান দিকে সকালের সূর্য গাছের ফাঁক দিয়ে উঁকি মারছে। আমরা এগিয়ে চলেছি সুন্দর প্রাকৃতিক শোভার মধ্যে দিয়ে। চন্ডিগড় শহরটা বেশ সুন্দর। সাজানো গোছানো। সকালের শহর। রাস্তার পাশে সম্ভবত কামানের রেপ্লিকা দাঁড় করানো। সকালের শরীর চর্চার দৌড় তখনও চলছে। চন্ডিগড় শহর বেশ সবুজ। প্রচুর গাছপালা। কিছুটা এগোনোর পরেই সামনে এলো টোল প্লাজা। অটো ডিডাক্ট হয়ে গেলো টোল ট্যাক্স। রাস্তা বেশ সুন্দর। চওড়া রাস্তা। সমতল থেকে কখন যে পাহাড়ি রাস্তা শুরু হয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না।

আমরা যত সিমলার দিকে এগোচ্ছি কুয়াশা আমাদের ঘিরে ফেলতে চাইছে। তবে তখন ঘোলাটে সূর্য দেখা যাচ্ছে।

চন্ডিগড় বেশ গরম। গাড়িতে AC না চালালে কষ্ট হতো। রাস্তার পাশে ওয়াইন শপ। বেড়াতে বেরিয়ে কেউ কেউ জীবন সঙ্গীর মতো এটাকেও সঙ্গে নেয়। পাহাড়ি এলাকায় ঘুরতে গেলে এটা আজকাল সাধারণ বেপার হয়ে গেছে। আমাদের এক সঙ্গীও একটা বোতল সঙ্গে নিলেন।

চন্ডিগড় থেকে সিমলা যাবার রাস্তা বেশ সুন্দর। সবুজ গাছপালা পাহাড়গুলোকে জীবন্ত করে রেখেছে।

এবার আমরা ব্রেকফাস্ট করে নেবো। রাস্তার পাশেই পাঞ্জাবি তড়কা নামে এক ধাবায় আমরা নামলাম। দারুন পরিবেশ। ধাবার পেছনে উঁচু পাহাড়। পাহাড়ের গায়ে গায়ে বাড়ি। আরেক পাশে গভীর খাদ। এই ধাবাগুলোতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হবার বেশ সুবিধা আছে। ধাবার ভিতরে বাইরে বসে খাবার জায়গা করা আছে। দোলনাও আছে। খাওয়াদাওয়া করে বা করার আগে একটু দোলনায় দুলে নিতেও পারেন। খারাপ লাগবে না।

আমরা কেউ খেলাম স্যান্ডউইচ কেউ লুচি তরকারি। নিচের ভিডিওতে চাক্ষুষ করে নিতে পারেন সবই। দারুন স্বাদের খাবার খেলাম। ট্রেন-এর খাবার সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। তাই নতুন করে কিছু বলবো না। ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে বেশ ফুরফুরে লাগছে তখন আমাদের সবাইকে। শরীর অনেক চনমনে হয়ে গেছে। দু-রাত ট্রেন জার্নির ধকল কিছুটা কমলো।

সিমলা তখনও বেশ কিছুটা দূরে। রাস্তায় যেতে যেতে মাঝে মাঝে চোখে পড়ছিলো রাস্তার পাশের বোর্ডে সিমলার দুরুত্ব। সবুজ পাহাড়ের মাঝে মাঝে ছোট ছোট গ্রাম আর প্রাকৃতিক শোভা দেখতে দেখতে চন্ডিগড় থেকে শিমলার যাত্রাপথ বেশ উপভোগ করবেন আপনিও।

সিমলা এখনো ৫৩ কিলোমিটার। প্রচুর কুয়াশা। কুয়াশায় ঢেকে গেছে পুরো পাহাড়, রাস্তাঘাট। 

এবার একটু চা বিরতি। অসাধারণ এক সুন্দর পরিবেশে আমরা থামলাম চা পানের জন্য। পাহাড় থেকে রাস্তা সবই কুয়াশায় ঢাকা। দারুন লাগছে চারপাশ। না গরম না ঠান্ডা পরিবেশ। এমন পরিবেশে কিছু ফোটোগ্রাফি ভিডিওগ্রাফি করে নেওয়া যেতেই পারে।

চায়ের দোকানের কুকুটা বেশ সুন্দর। নাম টাইগার। বেশ ভালো চেহারা। বড় বড় লোম। পাহাড়ি কুকুরের যেমন হয়। ছোট লোম থাকলে পাহাড়ি ঠান্ডায় বাঁচবেনা। লোক দেখলেই চিৎকার চেঁচামেচি নেই। একদম শান্ত। আসলে প্রতিদিন প্রচুর পর্যটকের সাথে এর দেখা হয়। ভাব বিনিময় হয়। যে যেমন পারে খাবার কিনে খাওয়ায়। সবার সাথেই ভালোবাসা গড়ে ওঠে। তবে সেটা মাত্র কয়েক ঘন্টা বা মিনিটের। তারপর আবার বিচ্ছেদ। এটাও ওর অভ্ভাস হয়ে গেছে।

চা বিরতির পর আবার শুরু হলো আমাদের যাত্রা। হালকা বৃষ্টি পড়ছে এবার। পাহাড়ের গা গাছপালা ভিজছে। সবকিছুই সবুজ হয়ে উঠছে আরো।

সিমলার কাছাকাছি আমরা এসে গেছি মনে হচ্ছে। আশপাশের পরিবেশ সেটাই বলে দিচ্ছে আমাদের। কুয়াশা ঢাকা সিমলা শহরে আপনাকে স্বাগত।

সিমলায় আমাদের হোটেল বেশ খানিকটা উঁচুতে। সেখানে উঠতে আমাদের সকলের কমবেশি দম শেষ। যখন আমরা উপরে উঠে হাঁপাচ্ছি, তখনও আমাদের ৭৫ বছর বয়েসী সফর সঙ্গী উঠছেন ধীরে ধীরে।

মন্তব্যসমূহ