এই তারিখে
গুয়ে মঠ
বৌদ্ধ ধর্মের প্রাচীন ইতিহাস
লাহুল-স্পিটি
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
সারাহান ভারতের হিমাচল প্রদেশ রাজ্যে অবস্থিত একটি সুন্দর গ্রাম। এটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রাচীন মন্দির এবং হিমালয়ের সান্নিধ্যের জন্য পরিচিত। আপনি যদি সারাহানে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন, তাহলে জেনে নিন ওখানে গিয়ে আপনি কি কি করতে পারেন:
সমৃদ্ধশালী প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে সারাহান বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আবাসস্থল। হিমালয় মোনাল, ফিজ্যান্ট এবং আরও অনেক রঙিন পাখি দেখতে গ্রামের চারপাশে হাঁটাহাঁটি করা যায় বা কাছাকাছি জঙ্গলে ঘুরে বেড়ান যায়।
গ্রামবাসীদের সাথে মিলেমিশে স্থানীয় সংস্কৃতি এবং জীবনধারার সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। তাদের দৈনন্দিন কার্যকলাপ, তাদের ঐতিহ্য সম্পর্কে জানা যায় এবং হিমাচলি গ্রামীণ জীবনের আভাস পাওয়া যায়।
সারাহানের রাস্তাঘাটে প্রচুর কুকুর আছে। যেগুলি ভয়ঙ্কর দেখতে অথচ শান্ত। পাহাড়ি কুকুর এমনি হয় হয়তো।
সারাহানের প্রধান আকর্ষণ ভিমাকালী মন্দির। এটি একটি প্রাচীন মন্দির যা হিন্দু দেবী ভীমাকালীর উদ্দেশ্যে নিবেদিত, এবং এর স্থাপত্য এবং জটিল কাঠের কাজ তাকিয়ে থাকার মতো।
ভীমকালী মন্দির 51টি শক্তিপীঠের মধ্যে একটি, যা দেবী শক্তিকে উৎসর্গ করা পবিত্র স্থান, যা দেবী বা দুর্গা নামেও পরিচিত।
ভীমকালী মন্দিরের একটা ছোট্ট ইতিহাস আছে :
কিংবদন্তি অনুসারে প্রাচীন হিন্দু মহাকাব্য, মহাভারতে মহান কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পরে, পাণ্ডবরা যুদ্ধের সময় তাদের করা পাপের প্রায়শ্চিত্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। দেবী দুর্গার কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য, তারা এই স্থানে তপস্যা করেছিলেন, যেখানে আজ ভীমকালী মন্দির দাঁড়িয়ে আছে।
ভীমকালী মন্দির বহু শতাব্দী প্রাচীন, এবং এটি সময়ের সাথে সাথে বেশ কিছু পরিবর্তন ও সম্প্রসারণ করেছে। মূল মন্দিরটি এই অঞ্চলে প্রচলিত কাঠ-কুনি স্থাপত্যশিল্পে নির্মিত একটি অসাধারণ কাঠের কাঠামো।
মন্দিরের বর্তমান কাঠামোটি বুশহর রাজবংশের শাসনকালে নির্মিত বলে মনে করা হয়, যারা ৬ম থেকে 18 শতক পর্যন্ত এই অঞ্চলে শাসন করেছিল। বুশহর রাজবংশ শিল্প, সংস্কৃতি এবং ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য পরিচিত ছিল এবং তারা ভীমাকালী মন্দিরের উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিল।
মন্দির চত্বরে ঢোকার পর একটা সাইড দেখে জুতো খুলে রাখলেই হয়। চুরি হবার ভয় নেই।
মন্দির চত্বরে ঢুকেই ডান দিকে আছে একটা শিব মন্দির। প্রথমে সেখানে ঘুরে দেখে নিন। বেশ ভালো লাগবে।
মূল মন্দির একটু ভিতরে। মন্দিরের সম্প্রসারণ অংশ বেশ অনেকটাই। সময় নিয়ে ঘুরে দেখে নিতে পারেন সবই। মূল মন্দিরের দিকে যাবার প্রবেশ দ্বারের কারুকার্য অসাধারণ। ওটা দিয়ে ভিতরে ঢুকলেই মূল মন্দিরের প্রবেশ দ্বার দেখতে পাবেন।
মূল মন্দিরের আশপাশ ঘুরে দেখা ফটো তলায় কোনো বিধি নিষেধ নেই। কিন্তু মূল মন্দিরে এসব নিষেধ। বাইরে থেকেই মূল মন্দিরের ছবি নিয়ে নিন। আসে পাশের ছবি তুলে নিন, ভিডিও করে নিন।
মূল মন্দিরে প্রবেশ করতে মোবাইল, ক্যামেরা, প্যান্টের বেল্ট একটা লকার-এ রেখে দিতে হয়। ওখানে গার্ড আছে যে আপনাকে গাইড করে দেবে। এছাড়া একটা নিয়মাবলী দেখতেও পাবেন।
ভীমাকালী মন্দির ঐতিহ্যবাহী হিমাচলি স্থাপত্যের একটি চমৎকার উদাহরণ। এটি কাঠের এবং পাথরের কাঠামোর মিশ্রণ, জটিলভাবে খোদাই করা কাঠের বিম, স্তম্ভ এবং দরজা। মন্দিরের স্বতন্ত্র প্যাগোডা-শৈলীর ছাদ, কাঠের খোদাই এবং পিতলের প্লেট দ্বারা সাজসজ্জা, এটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি।
মন্দির কমপ্লেক্সে বিভিন্ন দেবদেবীর প্রতি উৎসর্গীকৃত বেশ কয়েকটি উপাসনালয় এবং কাঠামো রয়েছে, যা বিভিন্ন হিন্দু ধর্মীয় ঐতিহ্যের সংমিশ্রণকে প্রতিফলিত করে। এটিতে একটি জাদুঘরও রয়েছে যা মন্দিরের ইতিহাস ও সংস্কৃতির সাথে সম্পর্কিত প্রাচীন নিদর্শন, মূর্তি এবং মূল্যবান ধ্বংসাবশেষ প্রদর্শন করে।
নিষিদ্ধ জিনিসপত্র লকার-এ রেখে মূল মন্দিরের গেট দিয়ে প্রবেশ করে যান। লাল কার্পেট পাতা রাস্তা ধরে ঢুকে যাবেন মূল মন্দিরে। ভিতরে মজবুত কাঠের সিঁড়ি। নিরিবিলি শান্ত পরিবেশ। উপরে উঠে মন্দির পরিক্রমা করতে হয় প্রথমে। তারপর প্রবেশ করতে হয় ভীমাকালী দেবী দর্শনে। মন ভোরে দর্শন আর প্রার্থনা করে বেরিয়ে আসতে হয়।
সকাল সন্ধ্যে আরতি হয় এখানে। সন্ধ্যের আরতি দেখার পারমিশন নেই। তবে ভোর বেলার আরতি চাক্ষুষ করতেই পারেন। তার জন্য সকাল ৬ তার মধ্যে চলে আসতে হবে।
এরপরে রাজবাড়ী। স্থানীয় বাসিন্দাদের তথ্য অনুযায়ী একটু দূরেই রয়েছে রাজবাড়ী। মন্দির থেকে বেরিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। সন্ধ্যে নামার আগেই দেখে নিতে হবে।
হিমাচল প্রদেশ আপেল বাগানের জন্য পরিচিত, এবং সারাহানও এর ব্যতিক্রম নয়। আপেল বাগানে ঘুরে বেড়ান, ফসল কাটার সময় আপেল বাছাইয়ের অভিজ্ঞতা নিন এবং সদ্য তোলা আপেলের স্বাদ নিন।
সারাহান ফটোগ্রাফি উত্সাহীদের জন্য যথেষ্ট ভালো একটা জায়গা। এই অঞ্চলে পাওয়া অত্যাশ্চর্য প্রাকৃতিক দৃশ্য, ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য, প্রাণবন্ত সংস্কৃতি সুন্দর করে ক্যামেরা বন্দি করে ফেলা যায়।
সারাহানের প্রাকৃতিক অবস্থা চেক করতে ভুলবেন না যখন সেখানে যাবার প্ল্যান করবেন। বিশেষ করে শীত কালে যখন এখানে প্রচুর বরফ পরে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের তথ্য অনুযায়ী এই রাজবাড়ী রাত্রি আটটা পর্যন্ত খোলা থাকে। এখানে আমাদের ঘড়ির সময় অনুযায়ী রাত্রি আটটা নাগাদ সন্ধ্যা হয়।
এনারা স্থানীয় বাসিন্দা। বিকেলের সময়টা এনাদের এখানেই কেটে যায়। এখানে যারা ভ্রমণ করতে আসেন, তাদের সাথে এনারা সুন্দরভাবে মিশে যেতে পারেন। আর ছবি তুলতে দারুন ভালোবাসেন। তাই হালকা করে হয়ে গেলো সেটাও।
বহু প্রাচীন এই রাজবাড়ী। একটা সময় যেটা আভিজাত্যে পরিপূর্ণ ছিল আজ সেটা সম্পূর্ণ মলিন। আলোবাতাসহীন অন্ধকার নিস্তব্ধতা গিলে ফেলেছে এটাকে। পরিত্যাক্ত হলেও মোছামুছির কাজ এখনো চলে সেটা দেখলেই বোঝা যায়।
সামনের দিকে দুপাশে আপেল গাছ মাঝে সবুজ ঘাসে ঢাকা উঠোন। একটা বারান্দা রয়েছে। ভিতরে ঢোকার দরজা বন্ধ। বারান্দায় দুটো চেয়ার খালি পরে আছে বহুদিন। পর্যটক হয়তো রোজ নাও আসতে পারে। তবে এই বারান্দায় আজও রোদ্দুর আসে।
সারাহানের শেষ বিকেলের কিছুটা সময় অচেনা অজানা অন্যের বাড়ির নাচ কানাচ ঘুরে দেখেই কেটে গেলো।
সুন্দর ফুল ফুটে আছে গাছে গাছে। আপেল গাছে সবে মাত্র আপেল ফলতে শুরু করেছে। সামনের মাঠ বা উঠোনটার ঘাসের উপর ফুটে আছে ঘাসফুল। সব মিলিয়ে মনোমুগ্ধকর একটা জায়গা।
সন্ধ্যা নামলেই সব ঘুটঘুটে অন্ধকার। আর সেই অন্ধকার ভেদ করে বহুদূর পর্যন্ত চলে যায় ভীমাকালী মন্দিরের আলো আর আরতির ঘন্টাধ্বনি। গোটা সারাহান জুড়ে নেমে আসে স্বর্গীয় শান্তির পরিবেশ। সেটার স্বাক্ষী হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে হলো আজ। এই ঘন্টাধ্বনি সবার মঙ্গল করুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন